ইন্টারনেট কি?
ইন্টারনেট হলো একটি বৈশ্বিক নেটওয়ার্কিং সিস্টেম যা কম্পিউটার ও ডিভাইসগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করতে ব্যবহৃত হয়। এটি বিভিন্ন প্রযুক্তি, প্রোটোকল এবং অবকাঠামোর মাধ্যমে ডেটা শেয়ারিং, তথ্য আদান-প্রদান, এবং পরিষেবা প্রদান করে।
ইন্টারনেটের মূল বৈশিষ্ট্য:
- যোগাযোগের মাধ্যম: ইমেল, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও কল ইত্যাদি।
- তথ্যের ভাণ্ডার: ওয়েবসাইট, ব্লগ, অনলাইন লাইব্রেরি, এবং সার্চ ইঞ্জিন।
- বিনোদন: ভিডিও স্ট্রিমিং, গেমিং, সঙ্গীত শুনা।
- ই-কমার্স: পণ্য ও পরিষেবার ক্রয়-বিক্রয় এবং ডিজিটাল মার্কেটিং।
- শিক্ষা ও গবেষণা: অনলাইন কোর্স, ই-বুকস, এবং গবেষণার সুযোগ।
ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে?
Internet মূলত সার্ভার, রাউটার, ও কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করে। যখন আপনি কোনো ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন, তখন আপনার ডিভাইস থেকে একটি অনুরোধ (Request) সার্ভারে পাঠানো হয়। সার্ভার সেই তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে এবং আপনাকে প্রদর্শন করে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা
বর্তমান অবস্থা:
- ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সংখ্যা:
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ১৩ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, যার বেশিরভাগ মোবাইল Internet ওপর নির্ভরশীল। - মোবাইল ইন্টারনেট:
গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটক—এই চারটি প্রধান মোবাইল অপারেটর দেশজুড়ে 4G সেবা প্রদান করছে। 5G সেবা চালুর কাজও শুরু হয়েছে। - ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট:
বাসা ও অফিসের জন্য ফাইবার অপটিক ব্রডব্যান্ড সেবা বেশ জনপ্রিয়। দেশে বিভিন্ন আইএসপি (Internet Service Providers) এই পরিষেবা প্রদান করে থাকে, যেমন: বিডিকম, এডিএন, ফাইবার অ্যাট হোম ইত্যাদি। - গতি ও খরচ:
গত কয়েক বছরে Internet গতি অনেক বেড়েছে, তবে গ্রামীণ অঞ্চলে এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। শহরের তুলনায় গ্রামে ইন্টারনেট সেবার খরচ বেশি এবং গতিও তুলনামূলকভাবে ধীর। - ডিজিটাল বাংলাদেশ উদ্যোগ:
সরকার “ডিজিটাল বাংলাদেশ” ভিশনের অধীনে Internet সেবা সুলভ ও সবার কাছে পৌঁছে দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। শিক্ষা, ব্যবসা, এবং প্রশাসনের ডিজিটালাইজেশনে Internet ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী
বাংলাদেশে ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়:
১. মোবাইল অপারেটররা (মোবাইল ইন্টারনেট সেবা)
মোবাইল অপারেটররা দেশের বৃহত্তম Internet ব্যবহারকারীদের একটি অংশকে সেবা প্রদান করে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- গ্রামীণফোন (Grameenphone)
বাংলাদেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর। সারা দেশে 4G সেবা প্রদান করছে এবং 5G-এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। - রবি (Robi)
গ্রামীণফোনের পর সবচেয়ে বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে। এটি 4G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দ্রুত Internet সেবা দেয়। - বাংলালিংক (Banglalink)
দ্রুতগতির Internet এবং গ্রামীণ অঞ্চলে উন্নত সেবা প্রদানের জন্য জনপ্রিয়। - টেলিটক (Teletalk)
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান। এটি বাংলাদেশের একমাত্র সরকারি মোবাইল অপারেটর। গ্রামীণ অঞ্চলে সেবা সম্প্রসারণে কাজ করছে এবং 5G চালু করেছে পরীক্ষামূলকভাবে।
২. ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী (ISP)
ব্রডব্যান্ড সেবার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সারা দেশে কাজ করছে। উল্লেখযোগ্য ব্রডব্যান্ড সেবা প্রদানকারীরা হলো:
- বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (BTCL)
সরকারি প্রতিষ্ঠান। সাশ্রয়ী মূল্যে ফাইবার অপটিক Internet সেবা প্রদান করে। - ফাইবার অ্যাট হোম (Fiber@Home)
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উচ্চগতির Internet সেবা প্রদান করে। - কুইকনেট (Qubee)
উচ্চ গতির ওয়ারলেস Internet পরিষেবা দেওয়ার জন্য পরিচিত। - বিডিকম (BDCOM)
কর্পোরেট এবং বাসাবাড়িতে Internet সেবা প্রদান করে। - এডিএন (ADN)
কর্পোরেট অফিস এবং শহরাঞ্চলে উন্নত Internet সেবা প্রদানকারী একটি বৃহৎ প্রতিষ্ঠান।
৩. অন্যান্য উল্লেখযোগ্য আইএসপি (ISP):
- Aamra Networks
- Amber IT
- Link3 Technologies
- Smile Broadband
- Dohatec New Media
৪. স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা:
স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দূরবর্তী অঞ্চল বা গ্রামীণ এলাকায় Internet সেবা দিতে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- V-SAT (BTCL এবং প্রাইভেট কোম্পানিগুলো)
- স্টারলিংক (SpaceX), তবে এটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ
বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড Internet সংযোগ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। উচ্চগতির Internet এবং নিরবচ্ছিন্ন সংযোগের জন্য ব্রডব্যান্ড সেবা বাসা, অফিস এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়।
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের বৈশিষ্ট্য
- উচ্চ গতি:
সাধারণত ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি ৫ Mbps থেকে শুরু করে ১ Gbps বা তার বেশি হতে পারে। - নিরবচ্ছিন্ন সেবা:
মোবাইল ইন্টারনেটের তুলনায় ব্রডব্যান্ড সংযোগ বেশি স্থিতিশীল এবং নিরবচ্ছিন্ন। - অসীম ডাটা ব্যবহার:
বেশিরভাগ ব্রডব্যান্ড প্যাকেজে আনলিমিটেড ডাটা ব্যবহার করা যায়। - মূল্য:
ব্রডব্যান্ড সংযোগের খরচ তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী, বিশেষ করে নিয়মিত উচ্চগতির Internet ব্যবহারকারীদের জন্য।
ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্য উল্লেখযোগ্য আইএসপি (ISP):
বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি Internet সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) ব্রডব্যান্ড সেবা প্রদান করছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
১. Link3 Technologies
- গতি: ১০ Mbps থেকে ১০০ Mbps পর্যন্ত।
- প্যাকেজ: গড়ে মাসিক ১,২০০ টাকা থেকে শুরু।
- অতিরিক্ত সুবিধা: নিরবচ্ছিন্ন সেবা এবং কর্পোরেট গ্রাহকদের জন্য কাস্টমাইজড সলিউশন।
২. Amber IT
- বাসা এবং অফিসের জন্য নির্ভরযোগ্য ব্রডব্যান্ড সংযোগ।
- সাশ্রয়ী মূল্যে ভয়েস কল এবং Internet প্যাকেজ।
৩. Fibre@Home
- উন্নত ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক।
- উচ্চগতি এবং স্থিতিশীলতা।
৪. BDCOM
- গড়ে ৫ Mbps থেকে ৩০ Mbps পর্যন্ত প্যাকেজ।
- গ্রাহক সেবা ভালো এবং কর্পোরেট সেক্টরে জনপ্রিয়।
৫. Qubee
- ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড সেবার জন্য পরিচিত।
- উচ্চ গতির Internet পরিষেবা।
৬. Aamra Networks
- মূলত কর্পোরেট সেবা প্রদান করে।
- উচ্চমানের ব্রডব্যান্ড পরিষেবা এবং ক্লাউড সলিউশন।
সংযোগ নেয়ার ধাপ:
১. প্রোভাইডার নির্বাচন:
আপনার এলাকার জন্য সেরা আইএসপি খুঁজে বের করুন।
২. প্যাকেজ নির্বাচন:
আপনার ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে মাসিক প্যাকেজ নির্বাচন করুন।
৩. আবেদন:
প্রোভাইডারের অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করুন বা অনলাইনে আবেদন করুন।
৪. ইন্সটলেশন চার্জ:
বেশিরভাগ আইএসপি ইন্সটলেশনের জন্য এককালীন চার্জ নিয়ে থাকে। সাধারণত এটি ৫০০-২০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে।
গড় খরচ:
- বাসার জন্য: ১,২০০-৩,৫০০ টাকা/মাস।
- অফিস বা কর্পোরেট: ৫,০০০+ টাকা/মাস।
পরিশেষ
পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের সম্প্রসারণ ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। মোবাইল Internet থেকে শুরু করে ব্রডব্যান্ড সংযোগ পর্যন্ত, প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি এবং সেবার মান বাড়ছে। Internet এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এটি শিক্ষা, ব্যবসা, বিনোদন এবং সরকারি সেবায় এক বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
তবে, গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলে Internet সংযোগ এবং গতি বাড়ানোর উদ্যোগ আরও জোরদার করা প্রয়োজন, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ প্রযুক্তির সুবিধা সমানভাবে পেতে পারে।
FAQs
ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ কি?
ইন্টারনেট শব্দটি এসেছে "ইন্টারকানেক্টেড নেটওয়ার্ক" থেকে, যার অর্থ "আন্তঃসংযুক্ত নেটওয়ার্ক"।
ইন্টারনেটের পূর্ণরূপ:
I - Interconnected
N - Network
বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয় কত সালে ?
বাংলাদেশে ইন্টারনেট চালু হয় ১৯৯৬ সালের ৪ জুন।
এই দিনে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (BTCL), যা তখন বাংলাদেশ টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন বোর্ড (BTTB) নামে পরিচিত ছিল, প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট সেবা চালু করে।
বাংলাদেশে 4G নেটওয়ার্ক কবে চালু হয়?
বাংলাদেশে 4G নেটওয়ার্ক চালু হয় ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি।
এই দিন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC) দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোর মধ্যে 4G লাইসেন্স প্রদান করে। এরপর গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক এবং টেলিটক একযোগে 4G সেবা চালু করে।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা কত?
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩৮.৬২ মিলিয়ন (১৩ কোটি ৮৬ লাখ)। এর মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ১২৪.৮৮ মিলিয়ন এবং ব্রডব্যান্ড (ISP + PSTN) ব্যবহারকারী ছিলেন ১৩.৭৪ মিলিয়ন। এটি বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (BTRC)-এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী প্রকাশিত হয়েছে
Marianna Vasquez
I’m often to blogging and i really appreciate your content. The article has actually peaks my interest. I’m going to bookmark your web site and maintain checking for brand spanking new information.
Kiera Mann
I appreciate you sharing this blog post. Thanks Again. Cool.