দাবা খেলা কি?
দাবা (Chess) হলো একটি জনপ্রিয় বোর্ড গেম, যা দুইজন খেলোয়াড়ের মধ্যে খেলা হয়। এটি বুদ্ধি, কৌশল এবং পরিকল্পনার মিশ্রণে একটি মানসিক যুদ্ধ। দাবা খেলার প্রধান লক্ষ্য হলো প্রতিপক্ষের রাজাকে “চেকমেট” করা, অর্থাৎ এমন অবস্থায় নিয়ে আসা যেখানে রাজা আর পালাতে বা নিজেকে রক্ষা করতে পারে না।
দাবা বোর্ড: গঠন, ঘর এবং বিন্যাস
দাবা বোর্ড হল একটি ৮x৮ = ৬৪টি ঘরের একটি স্কয়ার বোর্ড, যেখানে কালো এবং সাদা (অথবা গাঢ় এবং হালকা) ঘরগুলো পর্যায়ক্রমে সাজানো থাকে। এই বোর্ডে দাবার ঘুঁটি গুলোকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সাজানো হয় এবং খেলোয়াড়রা তাদের চাল দেন।
দাবা বোর্ডের গঠন
- আকার: ৮ সারি (রো) এবং ৮ কলাম (কলাম) নিয়ে মোট ৬৪টি ঘর।
- ঘরের রঙ: বোর্ডের ঘরগুলো গাঢ় (কালো) এবং হালকা (সাদা) রঙে সাজানো হয়, যা একটি চেকারবোর্ডের মতো দেখায়।
- ঘরের নামকরণ: প্রতিটি ঘরের নাম একটি অক্ষর (a-h) এবং সংখ্যা (1-8) দিয়ে চিহ্নিত হয়।
- কোন দিক থেকে ধরা হয়? বোর্ডটি এমনভাবে সাজাতে হয় যাতে খেলার শুরুতে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ডান দিকের নিচের কোণা সাদা ঘর হয়।
- উদাহরণ: a1, b1, c1… h8 এর মাধ্যমে প্রতিটি ঘর চিহ্নিত করা হয়।
ঘুঁটির বিন্যাস (Setup of Pieces)
দাবা খেলার সময় প্রতিটি খেলোয়াড় ১৬টি ঘুঁটি পায়। ঘুঁটিগুলো নিচের মতো সাজানো হয়:
১ম সারি (১ এবং ৪ নম্বর Row)
- রুক (Rook): বোর্ডের চার কোণ (a1, h1, a8, h8) অবস্থানে থাকে।
- নাইট (Knight): রুক-এর পাশে (b1, g1, b8, g8) ঘোড়া থাকে।
- বিশপ (Bishop): নাইটের পর (c1, f1, c8, f8) বিশপ বা হাতি থাকে।
- কুইন (Queen): নিজের রঙের উপর দাঁড়ায় (সাদা কুইন সাদা ঘরে, কালো কুইন কালো ঘরে)।
- কিং (King): কুইনের পাশে (ই1, ই8) রাজা থাকে।
দ্বিতীয় সারি (2 এবং 7 নম্বর সারি)
- পাওন (Pawn): ৮টি পিওন (a2 থেকে h2 এবং a7 থেকে h7) সারিবদ্ধভাবে থাকে।
দাবা বোর্ডের নামকরণ (Algebraic Notation)
দাবা বোর্ডে ঘরগুলোকে চিহ্নিত করার জন্য একটি সংখ্যা-অক্ষর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
- দাঁড়িয়ে থাকা খেলোয়াড়ের দিক থেকে সারিগুলো (Row) ১ থেকে ৮ পর্যন্ত নম্বর পায়।
- Column গুলো এ, বি, সি, ডি…এইচ নামে পরিচিত হয়।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘর:
- e4: দাবার কেন্দ্রস্থলের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘর।
- d4, d5, e4, e5: বোর্ডের কেন্দ্রীয় চারটি ঘর, যেগুলো খেলার শুরুতে নিয়ন্ত্রণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
দাবা বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল
- Center: ডি4, ই4, ডি5, ই5 এই ৪টি ঘর Center অঞ্চল বলে পরিচিত। এই Code নিয়ন্ত্রণ করা খেলায় strategical সুবিধা দেয়।
- প্রান্ত (Edge) এবং কোণা (Corner): বোর্ডের প্রান্তের ঘর (যেমন a1, a8, h1, h8) এবং প্রান্তবর্তী সারি/কলাম নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
- প্রতিপক্ষের খেলার ঘর: প্রতিপক্ষের তৃতীয় এবং চতুর্থ সারি খেলার মাঝামাঝি সময়ে পিওনের অগ্রগতি এবং আক্রমণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
কৌশলগত দিক থেকে বোর্ডের গুরুত্ব
- Centre নিয়ন্ত্রণ: ডি4, ই4, ডি5, ই5 Centre ঘরগুলো নিয়ন্ত্রণ করা Important, কারণ এখান থেকে ঘুঁটির Move সহজ হয়।
- পিওনের প্রমোশন: বোর্ডের শেষ সারিতে পৌঁছালে পিওনকে রানি, রুক, নাইট বা বিশপে উন্নীত করা যায়।
- ক্যাসলিং: রাজার সুরক্ষার জন্য ক্যাসলিং একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা কেবল তখনই সম্ভব, যখন রাজা এবং রুক একই সারিতে থাকে এবং তাদের মাঝে কোনো ঘুঁটি না থাকে।
দাবা খেলার ইতিহাস
দাবা খেলার ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। এটি শুধুমাত্র একটি খেলা নয়, বরং এটি বিভিন্ন সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। দাবার ইতিহাস অনেকটাই ভারতের “চতুরঙ্গ” (Chaturanga) খেলার সাথে যুক্ত। যা সময়ের সাথে বিভিন্ন সংস্কৃতিতে বিবর্তিত হয়ে আজকের আধুনিক দাবা খেলার রূপ ধারণ করেছে।
দাবার উৎপত্তি (৬ষ্ঠ শতক, ভারত)
Chess খেলার উৎপত্তি প্রাচীন ভারতে, প্রায় ৬ষ্ঠ শতকে। সেই সময়ে এই খেলাটির নাম ছিল “চতুরঙ্গ”। “চতুরঙ্গ” শব্দটির অর্থ চারটি ভাগ বা উপাদান। এই চার উপাদান হলো:
- রথ (রুক)
- হাতি (বিষপ)
- ঘোড়া (নাইট)
- পদাতিক (পাওন বা সৈনিক)
এই খেলার কাঠামো ভারতীয় যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিফলন ছিল, যেখানে সৈন্যবাহিনী চারটি প্রধান শাখায় বিভক্ত ছিল। চতুরঙ্গ খেলা ছিল চারজন খেলোয়াড়ের মধ্যে, এবং পাশা (ডাইস) ব্যবহার করা হতো চাল নির্ধারণের জন্য।
পারস্যে দাবার বিস্তার (৭ম শতক)
ভারত থেকে Chess পারস্যে (ইরান) ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে এটি পরিচিত হয় “শতরঞ্জ” নামে। এখানে খেলার নিয়মে কিছু পরিবর্তন আনা হয়।
- “শাহ” শব্দটি “রাজা” বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা পরবর্তীতে “চেক” এবং “চেকমেট” (Shah Mat – অর্থ “রাজা মারা গেছে”) ধারণার উৎপত্তি করে।
- পারস্যে এই খেলার মূল লক্ষ্য ছিল রাজাকে ঘেরাও করা এবং চেকমেট করা।
- পারস্যের অভিজাতদের মধ্যে দাবা খেলা বুদ্ধিবৃত্তিক ও অভিজাত পেশার একটি অংশ হয়ে ওঠে।
আরব ও ইসলামি বিশ্বে দাবার বিস্তার (৮ম-৯ম শতক)
৭ম-৮ম শতকে, আরব ও ইসলামি বিজয়ের সময়, দাবা মুসলিম বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
- আরবি ভাষা-এ চতুরঙ্গ খেলার নাম হয়ে যায় “শতরঞ্জ”।
- ইসলামি বিশ্বে শতরঞ্জ খেলা ছিল শিক্ষিত এবং অভিজাত সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা।
- বিভিন্ন খ্যাতনামা ইসলামিক পণ্ডিত এবং বিজ্ঞানী দাবার কৌশল নিয়ে বই লিখেছিলেন।
- “শাহ” (রাজা) এবং “মাত” (মৃত) শব্দ দুটির আরবি সংস্করণ থেকেই “Check” এবং “Checkmate” শব্দের উৎপত্তি হয়।
ইউরোপে দাবার আগমন (১১শ-১৫শ শতক)
ইউরোপে শতরঞ্জ আসে মুসলিম স্পেন (আন্দালুসিয়া) হয়ে। এই সময়ে খেলার নিয়মে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়।
- ১৫শ শতকে স্পেন ও ইতালিতে “রানি” (কুইন) ঘুঁটি যুক্ত করা হয়, যা দাবার শক্তিশালী ঘুঁটি হয়ে ওঠে।
- রাজার ঘুঁটি-র ক্ষমতা সীমিত রাখা হয় (শুধুমাত্র এক ঘর চলতে পারে)।
- ১৫শ শতকে, আধুনিক শতরঞ্জ খেলার নিয়ম প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এটি “মডার্ন চেস” নামে পরিচিতি পায়।
ইউরোপে দাবার প্রসার (১৬শ-১৮শ শতক)
- ১৬শ শতকে শতরঞ্জ পুরো ইউরোপ জুড়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
- দাবা খেলা সেই সময়ে রাজকীয় ও অভিজাত সমাজের বিনোদনের মাধ্যম ছিল।
- স্পেন, ইতালি ও ফ্রান্স ছিল শতরঞ্জ কেন্দ্র, যেখানে অভিজাতরা এই খেলা খেলতেন।
- ১৮শ শতকে, দাবার প্রতি সাধারণ মানুষেরও আকর্ষণ বাড়তে থাকে এবং বিভিন্ন পাবলিক কফি হাউজে চেস খেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
আধুনিক দাবার জন্ম (১৮শ-২০শ শতক)
- ১৮শ শতকে, ফ্রান্স চেস কৌশল এবং তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা শুরু করে। চেস খেলার প্রথম কৌশলগত ধারণাগুলি এই সময়ে আসে।
- ১৯শ শতকে দাবা খেলার প্রতিযোগিতা (টুর্নামেন্ট) শুরু হয়।
- ১৮৫১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক দাবা টুর্নামেন্ট লন্ডনে অনুষ্ঠিত হয়।
- ১৮৮৬ সালে, উইলহেল্ম স্টেইনিটজ প্রথম দাবা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন।
- ১৯২৪ সালে, FIDE (Fédération Internationale des Échecs) বা আন্তর্জাতিক দাবা ফেডারেশন গঠিত হয়।
বিশ্ব চেস আধুনিক যুগ (২০শ-২১শ শতক)
- ১৯৭২ সালে, ববি ফিশার (আমেরিকা) এবং বোরিস স্পাসকি (রাশিয়া) এর মধ্যে বিখ্যাত বিশ্ব চেস চ্যাম্পিয়নশিপ হয়। এই খেলা বিশ্বজুড়ে প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়।
- গ্যারি কাসপারভ এবং দীপ ব্লু (IBM এর সুপার কম্পিউটার) এর ম্যাচ ১৯৯৭ সালে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে ওঠে, কারণ কম্পিউটার প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে হারিয়েছিল।
- ২০০০ সালের পরে, দাবা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছড়িয়ে পড়ে। Lichess.org, Chess.com এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মানুষ ঘরে বসেই দাবা খেলতে পারে।
- ম্যাগনাস কার্লসেন (Magnus Carlsen), নরওয়ের গ্র্যান্ডমাস্টার, বর্তমানে আধুনিক দাবার একজন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন এবং দাবার ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়।
দাবা খেলার নিয়ম
চেস খেলা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় বোর্ড গেম, যেখানে দুইজন খেলোয়াড় প্রতিযোগিতা করে। খেলার প্রধান লক্ষ্য হলো প্রতিপক্ষের রাজাকে “চেকমেট” করা। আপনি চাইলে ইন্টারনেটে সরাসরি প্রতিপক্ষের সাথে চেস খেলতে পারবেন। এখানে দাবা খেলার নিয়ম, ঘুঁটির চালচলন, বিশেষ পদক্ষেপ এবং খেলার ফলাফলের বিভিন্ন দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

১. ঘুঁটির চলাফেরা
রাজা (King)
- কত ঘর চলতে পারে?: রাজা প্রতিটি দিকে (উপর, নিচ, ডানে, বামে, তির্যকভাবে) একটি ঘর যেতে পারে।
- বিশেষ নিয়ম:
- ক্যাসলিং: রাজা এবং রুক (নৌকা) একসাথে চাল দিয়ে রাজাকে নিরাপদ করতে পারে।
- রাজাকে কখনো চেকমেট বা চেক অবস্থানে রাখা যায় না।
রানি (Queen)
- কত ঘর চলতে পারে?: রানি উল্লম্ব (উপর-নিচ), অনুভূমিক (ডানে-বামে) এবং তির্যক (ডায়াগোনাল) যেকোনো দিকে অসীম সংখ্যক ঘর যেতে পারে।
- শক্তি: রানি চেস সবচেয়ে শক্তিশালী ঘুঁটি।
রুক (Rook)
- কত ঘর চলতে পারে?: রুক (নৌকা) উল্লম্ব (উপর-নিচ) এবং অনুভূমিক (ডানে-বামে) যে কোনো দিকে অসীম সংখ্যক ঘর যেতে পারে।
- বিশেষ নিয়ম:
- ক্যাসলিং: রুক রাজার সাথে একসঙ্গে স্থান পরিবর্তন করতে পারে।
নাইট (Knight)
- কত ঘর চলতে পারে?: নাইটের চাল অন্য ঘুঁটির চেয়ে আলাদা। এটি “L” আকারে চলে (২ ঘর সোজা এবং ১ ঘর তির্যক বা ১ ঘর সোজা এবং ২ ঘর তির্যক)।
- বিশেষ নিয়ম:
- নাইট একমাত্র ঘুঁটি যা অন্য ঘুঁটির ওপর দিয়ে লাফিয়ে যেতে পারে।
- এটি প্রতিপক্ষের ঘর দখল করতে পারে এবং ঘুঁটি খেতে পারে।
বিশপ (Bishop)
- কত ঘর চলতে পারে?: বিশপ তির্যক (ডায়াগোনাল) দিকে যে কোনো সংখ্যক ঘর চলতে পারে।
- বিশেষ নিয়ম:
- প্রতিটি খেলোয়াড়ের দুটি বিশপ থাকে — একটি সাদা ঘরে এবং অন্যটি কালো ঘরে থাকে।
- একটি বিশপ কখনো তার ঘরের রঙ পরিবর্তন করতে পারে না।
পাওন (Pawn)
- কত ঘর চলতে পারে?:
- প্রথমবার চাল দেওয়ার সময়, পাওন ১ বা ২ ঘর সামনে যেতে পারে।
- পরবর্তী সময়ে, পাওন ১ ঘর করে সামনে যায়।
- পাওন তির্যকভাবে (ডায়াগোনাল) প্রতিপক্ষের ঘুঁটি খেতে পারে, কিন্তু সোজা ঘরে যেতে পারে না।
- বিশেষ নিয়ম:
- এন পাসাঁ (En Passant): যদি প্রতিপক্ষের পাওন পাশ দিয়ে ২ ঘর একসাথে যায়, তবে সাথে সাথেই তাকে তির্যকভাবে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
- পাওন প্রমোশন: পাওন বোর্ডের শেষ লাইনে পৌঁছালে এটি রানি, রুক, নাইট বা বিশপে রূপান্তরিত হতে পারে (যেকোনো ঘুঁটিতে রূপান্তর করা যায়, সাধারণত রানিতে রূপান্তর করা হয়)।
২. খেলার উদ্দেশ্য
চেস খেলার উদ্দেশ্য হলো প্রতিপক্ষের রাজাকে চেকমেট করা। চেকমেট এমন একটি অবস্থা, যেখানে রাজা আর কোনো উপায়ে পালাতে পারে না।
- চেক: যদি রাজা আক্রমণের মুখে পড়ে, তবে তাকে চেক বলা হয়।
- চেকমেট: যখন রাজা কোনোভাবেই পালাতে বা আত্মরক্ষা করতে পারে না, তখন এটি চেকমেট।
৩. বিশেষ নিয়ম (ক্যাসলিং, এন পাসাঁ এবং প্রমোশন)
ক্যাসলিং (Castling)
- উদ্দেশ্য: রাজাকে নিরাপদ করা।
- কীভাবে?: রাজা ২ ঘর ডান বা বাম দিকে যায় এবং রুক (নৌকা) তার ওপাশে চলে আসে।
- শর্ত:
- রাজা বা রুক আগে চলতে পারবে না।
- রাজা এবং রুকের মাঝে কোনো ঘুঁটি থাকা যাবে না।
- রাজা চেক অবস্থানে থাকতে পারবে না।
এন পাসাঁ (En Passant)
- কীভাবে?: যদি প্রতিপক্ষের পিওন পাশ দিয়ে ২ ঘর একসাথে এগিয়ে যায়, তবে পরবর্তী চালেই আপনি আপনার পাওন দিয়ে তাকে ধরে ফেলতে পারেন।
পাওন প্রমোশন (Pawn Promotion)
- কীভাবে?: পাওন যদি বোর্ডের শেষ সারিতে পৌঁছে যায়, তবে এটি রানি, নাইট, রুক বা বিশপে রূপান্তরিত করা যায়।
৪. খেলার ফলাফল (জয়-পরাজয়-ড্র)
- জয় (Win): চেকমেট হলে প্রতিপক্ষ হেরে যায়।
- ড্র (Draw): খেলা ড্র (অমীমাংসিত) হতে পারে নিম্নলিখিত অবস্থায়:
- স্টেলমেট: এমন একটি অবস্থা, যেখানে চাল দেওয়ার মতো বৈধ চাল নেই, কিন্তু রাজা চেক অবস্থায় নেই।
- পারস্পরিক সম্মতি: উভয় খেলোয়াড় ড্রতে সম্মত হলে।
- তিনবার পুনরাবৃত্তি: একই অবস্থান তিনবার ঘটলে।
- ৫০-মুভ রুল: ৫০টি পরপর চালের মধ্যে কোনো ঘুঁটি ধরা বা পাওন সরানো না হলে খেলা ড্র ঘোষণা করা হয়।
সংক্ষেপে দাবা খেলার নিয়ম
🟦 ঘুঁটি | 🏃♂️ চলাফেরা | ⚔️ আক্রমণ |
---|---|---|
রাজা | ১ ঘর (সব দিকে) | ১ ঘর |
রানি | যে কোনো দিকে (উল্লম্ব, অনুভূমিক, তির্যক) | যে কোনো দিকে |
রুক (নৌকা) | অনুভূমিক, উল্লম্ব | অনুভূমিক, উল্লম্ব |
নাইট (ঘোড়া) | L-আকৃতিতে ২-১ | L-আকৃতিতে ২-১ |
বিশপ (হাতি) | তির্যক | তির্যক |
পাওন (সৈনিক) | ১ ঘর, প্রথমে ২ ঘর | তির্যক |
FAQs
বিশ্ব দাবার নতুন রাজা কে?
বর্তমানে বিশ্ব দাবার নতুন রাজা হলেন ডিং লিরেন (Ding Liren)। তিনি ২০২৩ সালের বিশ্ব দাবা চ্যাম্পিয়নশিপে ইয়ান নেপোমনিয়াচ্চি (Ian Nepomniachtchi)-কে পরাজিত করে এই খেতাব অর্জন করেন।
দাবা খেলায় সর্বোচ্চ খেতাব কি?
দাবা খেলায় সর্বোচ্চ খেতাব হল "গ্র্যান্ডমাস্টার (Grandmaster - GM)"। এটি বিশ্ব দাবা সংস্থা FIDE (Fédération Internationale des Échecs) কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ উপাধি।
দাবা খেলায় ঘোড়ার মান কত?
দাবা খেলায় ঘোড়ার মান (Knight's value) সাধারণত ৩ পয়েন্ট ধরা হয়। দাবায় বিভিন্ন গুটির মান নির্ধারণ করা হয় তাদের শক্তি, গতিশীলতা এবং বোর্ডে প্রভাবের উপর ভিত্তি করে।
♘ দাবার বিভিন্ন গুটির মান
গুটি | প্রতীক | মান (পয়েন্ট) |
---|---|---|
পদাতিক (Pawn) | ♙ | 1 পয়েন্ট |
ঘোড়া (Knight) | ♘ | 3 পয়েন্ট |
হাতি (Bishop) | ♗ | 3 পয়েন্ট |
রুক (Rook) | ♖ | 5 পয়েন্ট |
রাণী (Queen) | ♕ | 9 পয়েন্ট |
রাজা (King) | ♔ | মূল্যহীন (কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলে গেম শেষ) |
দাবা শব্দের অর্থ কি?
- ভারতীয় উৎস: দাবা খেলা সম্ভবত "চতুরঙ্গ" নামে ভারত থেকে এসেছে, যার অর্থ "চার বাহিনী" (Chaturang)। এই শব্দটি চারটি প্রধান সেনাবাহিনীকে বোঝায়—পদাতিক (Infantry), ঘোড়া (Cavalry), হাতি (Elephant), এবং রথ (Chariot)—যা একটি আবহমান যুদ্ধের কৌশল বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। চতুরঙ্গের মাধ্যমে দাবা খেলার আদিরূপ তৈরি হয়েছিল।
- ইতিহাস: আধুনিক দাবার শিকড় ভারতীয় "চতুরঙ্গ" থেকে শুরু হলেও, পরবর্তীতে পারস্যে এটি "শাহর" (Shatranj) নামে পরিচিত হয়ে ওঠে, এবং তারপর আরব ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।
দাবা কে দাবা বলা হয় কেন?
দাবা নামটি "চতুরঙ্গ" থেকে এসেছে, যা মূলত ভারতীয় শব্দ। "চতুরঙ্গ" অর্থ "চার বাহিনী" (চতুর = চার, অঙ্গ = বাহিনী)। এটি প্রাচীন ভারতীয় সেনাবাহিনীর চারটি প্রধান বিভাগ—পদাতিক (Infantry), ঘোড়া (Cavalry), হাতি (Elephant), এবং রথ (Chariot)—বর্ণনা করেছিল। এই চার বাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন কৌশল এবং যুদ্ধের ধরন ছিল, এবং দাবা খেলা এই সামরিক কৌশলগুলির প্রতিফলন।
দাবা খেলার ধাপ কয়টি?
দাবা খেলা সাধারণত তিনটি প্রধান ধাপে বিভক্ত করা হয়:
প্রারম্ভিক ধাপ (Opening)
মধ্য খেলা (Middlegame)
শেষ খেলা (Endgame)
দাবা খেলার সবচেয়ে শক্তিশালী গুটি কোনটি?
দাবা খেলার সবচেয়ে শক্তিশালী গুটি রাণী (Queen)। রাণী সবচেয়ে শক্তিশালী গুটি কারণ এটি সোজা, তির্যক এবং আড়াআড়ি—সব ধরনের গতিতে চলতে পারে, যা একে খেলার মধ্যে সবথেকে কার্যকরী গুটি বানায়।
রাণী এককভাবে সব ধরনের গুটির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষেত্র দখল করতে সক্ষম। এটি ৯ পয়েন্ট মানের হিসেবে পরিগণিত হয়, যা এটি গেমে অপরিহার্য এবং শক্তিশালী করে তোলে।