এনজাইম কি?
এনজাইম (Enzyme) বা উৎসেচক হলো একটি প্রোটিন বা প্রোটিন-জাতীয় অণু, যা জীবদেহে রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে (Chemical Reactions) ত্বরান্বিত করে। সহজভাবে বললে, Enzyme হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক অনুঘটক (Catalyst), যা দেহের ভেতরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং কার্যকর করতে সাহায্য করে।
কীভাবে এনজাইম কাজ করে?
এনজাইম কাজ করে অ্যাকটিভ সাইট (Active Site) নামক বিশেষ অংশের মাধ্যমে, যেখানে সাবস্ট্রেট (Substrate) বা রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত হয়। Enzyme মূলত সাবস্ট্রেটকে ভেঙে বা নতুন পণ্য (Product) তৈরিতে সাহায্য করে।
এটি প্রধানত ৪টি ধাপে কাজ করে:
১. সাবস্ট্রেট বাঁধা (Substrate Binding)
- এনজাইমে একটি অ্যাকটিভ সাইট থাকে, যা সাবস্ট্রেটের সাথে যুক্ত হতে পারে।
- অ্যাকটিভ সাইট এবং সাবস্ট্রেটের সম্পর্কটি “লক-এন্ড-কি” বা “ইন্ডিউসড ফিট” মডেলের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায়।
- লক-এন্ড-কি মডেল: সাবস্ট্রেট ঠিক তালা ও চাবির মতো এনজাইমের অ্যাকটিভ সাইটে ফিট হয়।
- ইন্ডিউসড ফিট মডেল: সাবস্ট্রেট আসার পরে এনজাইম তার আকৃতি পরিবর্তন করে সাবস্ট্রেটকে ধরে ফেলে।
উদাহরণ: পেপসিন উৎসেচক পাকস্থলীতে প্রোটিনকে পেপটাইডে ভাঙতে সাহায্য করে।
২. এনজাইম-সাবস্ট্রেট কমপ্লেক্স (Enzyme-Substrate Complex) গঠন
- সাবস্ট্রেটটি অ্যাকটিভ সাইটে ঢোকার পরে, উৎসেচক সাবস্ট্রেটকে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে।
- এই পর্যায়ে “Enzyme-সাবস্ট্রেট কমপ্লেক্স” তৈরি হয়।
- এই অবস্থায় Enzyme সাবস্ট্রেটকে তার পণ্য বা প্রোডাক্টে রূপান্তর করার জন্য রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে।
উদাহরণ: অ্যামাইলেজ এনজাইম শর্করাকে ভেঙে মল্টোজ তৈরি করে।
৩. রাসায়নিক বিক্রিয়া (Chemical Reaction / Catalysis)
- এনজাইম সাবস্ট্রেটের ভেতরে থাকা রাসায়নিক বন্ধনকে দুর্বল করে ফেলে, ফলে সেই বন্ধন সহজে ভেঙে যায়।
- এক্ষেত্রে Enzyme রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাকটিভেশন এনার্জি (Activation Energy) কমিয়ে দেয়।
- Enzyme কখনো সাবস্ট্রেটকে ভেঙে পণ্য তৈরি করে, আবার কখনো দুইটি ছোট অণুকে জোড়া লাগিয়ে বড় অণু তৈরি করে।
উদাহরণ: লিপেজ (Lipase) এনজাইম চর্বিকে (Fat) ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গ্লিসারল তৈরি করে।
৪. পণ্য (Product) মুক্ত করা
- যখন সাবস্ট্রেট পণ্য (Products) এ রূপান্তরিত হয়, তখন পণ্যটি Enzyme থেকে আলাদা হয়ে যায়।
- এখন এনজাইমটি আবার একটি নতুন সাবস্ট্রেটের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত হয়।
- এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি Enzyme বহুবার একই কাজ করতে পারে।
উদাহরণ: ক্যাটালেজ Enzyme হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H₂O₂) কে ভেঙে অক্সিজেন (O₂) এবং পানি (H₂O) তৈরি করে।
এনজাইম কাজ করার মূল নীতিগুলো
পর্যায় | বর্ণনা |
---|---|
সাবস্ট্রেট বাঁধা | সাবস্ট্রেট অ্যাকটিভ সাইটে যুক্ত হয়। |
কমপ্লেক্স গঠন | সাবস্ট্রেট এবং Enzyme একসাথে “কমপ্লেক্স” তৈরি করে। |
বিক্রিয়া | Enzyme সাবস্ট্রেটের রাসায়নিক বন্ধন ভাঙে বা নতুন বন্ধন তৈরি করে। |
পণ্য মুক্তি | প্রোডাক্ট আলাদা হয়ে যায় এবং এনজাইম নতুন সাবস্ট্রেট গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হয়। |
গুরুত্বপূর্ণ শব্দ
- অ্যাকটিভ সাইট (Active Site): এনজাইমের বিশেষ অংশ যেখানে সাবস্ট্রেট যুক্ত হয়।
- সাবস্ট্রেট (Substrate): রাসায়নিক পদার্থ, যা Enzyme দ্বারা রূপান্তরিত হয়।
- এনজাইম-সাবস্ট্রেট কমপ্লেক্স: Enzyme ও সাবস্ট্রেট যখন একসাথে যুক্ত থাকে।
- অ্যাকটিভেশন এনার্জি (Activation Energy): বিক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি।
- প্রোডাক্ট (Product): Enzyme বিক্রিয়ার মাধ্যমে যে নতুন অণু তৈরি হয়।
এনজাইম কাজ করার উদাহরণ
এনজাইম | সাবস্ট্রেট | প্রোডাক্ট | অবস্থান |
---|---|---|---|
অ্যামাইলেজ | স্টার্চ | মল্টোজ | মুখের লালা এবং অন্ত্র |
পেপসিন | প্রোটিন | পেপটাইড | পাকস্থলী |
লিপেজ | ফ্যাট (লিপিড) | ফ্যাটি অ্যাসিড ও গ্লিসারল | অগ্ন্যাশয় ও অন্ত্র |
ক্যাটালেজ | হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H₂O₂) | পানি (H₂O) এবং অক্সিজেন (O₂) | কোষের ভিতরে |
উদাহরণ দিয়ে সহজভাবে বোঝানো
ধরা যাক, আপনার একটি বড় আকারের চকলেট বার আছে। এই চকলেটটি আপনার মুখে পুরোটাই ঢোকানো সম্ভব নয়, তাই আপনাকে এটি ভেঙে ছোট টুকরা করতে হবে।
- চকলেট বার = সাবস্ট্রেট
- আপনার দাঁত = এনজাইম
- ভাঙা চকলেট টুকরা = প্রোডাক্ট
এখন, আপনি চকলেটটি ছোট ছোট টুকরায় ভাগ করার জন্য দাঁত ব্যবহার করছেন। দাঁত (Enzyme) চকলেট (সাবস্ট্রেট) ভেঙে ছোট টুকরো (প্রোডাক্ট) তৈরি করছে। আপনার দাঁত বারবার একই কাজ করতে পারে। একইভাবে, একটি Enzyme বারবার সাবস্ট্রেটকে ভাঙতে বা একত্রিত করতে সক্ষম।
এনজাইম কীভাবে দ্রুত কাজ করে?
- তাপমাত্রা ও pH: প্রতিটি Enzyme একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও pH-তে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।
- অ্যাকটিভেশন এনার্জি কমায়: রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটাতে যে শক্তি প্রয়োজন, এনজাইম তা কমিয়ে দেয়।
- স্পেসিফিসিটি: Enzyme নির্দিষ্ট সাবস্ট্রেটের জন্য তৈরি, তাই এটি দ্রুত কাজ করে।
এনজাইম কত প্রকার ও কি কি?
Enzyme প্রধানত তাদের কার্যক্রম এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ার ধরণ অনুযায়ী ৬টি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। এই শ্রেণিবিভাগটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি (IUBMB) কর্তৃক নির্ধারিত। প্রতিটি Enzyme একটি নির্দিষ্ট কাজ বা বিক্রিয়া সম্পাদন করে।
1️⃣. অক্সিডোরিডাক্টেজ (Oxidoreductase)
- কাজ: এই এনজাইমটি অক্সিডেশন-রিডাকশন (Redox) বিক্রিয়া ঘটায়, অর্থাৎ একটি অণু থেকে ইলেকট্রন স্থানান্তর করে।
- উদাহরণ:
- ক্যাটালেজ (Catalase): হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H₂O₂) কে পানিতে (H₂O) এবং অক্সিজেনে (O₂) ভেঙে দেয়।
- ডিহাইড্রোজেনেজ (Dehydrogenase): গ্লুকোজ-৬-ফসফেটকে অক্সিডাইজ করে ৬-ফসফোগ্লুকোনোল্যাক্টনে রূপান্তর করে।
ব্যবহার: কোষে শ্বসনের সময় গ্লুকোজ থেকে শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে।
2️⃣. ট্রান্সফারেজ (Transferase)
- কাজ: এক অণু থেকে অন্য অণুতে ফাংশনাল গ্রুপ (যেমন: অ্যামিনো, ফসফেট বা মিথাইল গ্রুপ) স্থানান্তর করে।
- উদাহরণ:
- কিনেজ (Kinase): অ্যাডিনোসিন ট্রাইফসফেট (ATP) থেকে ফসফেট গ্রুপকে গ্লুকোজে স্থানান্তর করে গ্লুকোজ-৬-ফসফেট তৈরি করে।
- ট্রান্সআমিনেজ (Transaminase): অ্যামিনো গ্রুপকে এক অ্যামিনো অ্যাসিড থেকে অন্য অণুতে স্থানান্তর করে।
ব্যবহার: কার্বোহাইড্রেট বিপাকে (Metabolism) এবং প্রোটিন সংশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
3️⃣. হাইড্রোলেজ (Hydrolase)
- কাজ: পানি (H₂O) ব্যবহার করে রাসায়নিক বন্ধন ভাঙা।
- উদাহরণ:
- অ্যামাইলেজ (Amylase): স্টার্চকে ভেঙে মল্টোজ তৈরি করে।
- লিপেজ (Lipase): চর্বিকে (লিপিড) ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং গ্লিসারল তৈরি করে।
- প্রোটিয়েজ (Protease): প্রোটিনকে ভেঙে ছোট ছোট পেপটাইড এবং অ্যামিনো অ্যাসিডে রূপান্তর করে।
ব্যবহার: হজম প্রক্রিয়ায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি খাবারের শর্করা, প্রোটিন এবং ফ্যাট ভাঙতে সাহায্য করে।
4️⃣. লাইজ (Lyase)
- কাজ: এই এনজাইমটি রাসায়নিক বন্ধন ভাঙতে বা বন্ধন ছাড়া নতুন বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে, যেখানে পানি বা ATP প্রয়োজন হয় না।
- উদাহরণ:
- ডিক্যার্বক্সিলেজ (Decarboxylase): কোনো অণু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) অপসারণ করে।
- অ্যাল্ডোলেজ (Aldolase): গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় ফ্রুক্টোজ-১,৬-বাইফসফেট-কে গ্লিসারালডিহাইড-৩-ফসফেট এবং ডাইহাইড্রোক্সিসেটোন ফসফেটে ভেঙে ফেলে।
ব্যবহার: শ্বসন প্রক্রিয়ার (Respiration) গুরুত্বপূর্ণ ধাপে ভূমিকা রাখে।
5️⃣. আইসোমেরেজ (Isomerase)
- কাজ: কোনো অণুর গঠন বা বিন্যাস পরিবর্তন করে, কিন্তু রাসায়নিক সংকেত (Chemical Formula) অপরিবর্তিত রাখে।
- উদাহরণ:
- গ্লুকোজ-৬-ফসফেট আইসোমারেজ (Glucose-6-Phosphate Isomerase): গ্লুকোজ-৬-ফসফেটকে ফ্রুক্টোজ-৬-ফসফেটে রূপান্তর করে।
- ফসফোপেন্টোজ আইসোমারেজ: রাইবুলোজ-৫-ফসফেটকে রাইবোফসফেটে রূপান্তর করে।
ব্যবহার: গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় গ্লুকোজকে ফ্রুক্টোজে রূপান্তরিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
6️⃣. লিগেজ (Ligase)
- কাজ: দুটি অণুকে একত্রিত করে রাসায়নিক বন্ধন তৈরি করা। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত ATP প্রয়োজন হয়।
- উদাহরণ:
- DNA লিগেজ (DNA Ligase): ভাঙা DNA অংশকে পুনরায় একত্রিত করে DNA মেরামত করে।
- পাইরুভেট কার্বক্সিলেজ (Pyruvate Carboxylase): পাইরুভেটকে অক্সালোঅ্যাসেটেটে রূপান্তর করে, যা গ্লুকোনিওজেনেসিস প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যবহার: DNA সংশ্লেষণ এবং মেরামত (DNA Repair) এবং গ্লুকোজ উৎপাদনে ভূমিকা পালন করে।
এনজাইমের প্রকারভেদের সংক্ষিপ্ত তালিকা
Enzyme শ্রেণি | কাজ | উদাহরণ | উদাহরণ কাজ |
---|---|---|---|
1. অক্সিডোরিডাক্টেজ | ইলেকট্রন স্থানান্তর | ক্যাটালেজ, ডিহাইড্রোজেনেজ | হাইড্রোজেন পারক্সাইড ভাঙা |
2. ট্রান্সফারেজ | ফাংশনাল গ্রুপ স্থানান্তর | কিনেজ, ট্রান্সআমিনেজ | গ্লুকোজ-৬-ফসফেট তৈরি করা |
3. হাইড্রোলেজ | পানি ব্যবহার করে বন্ধন ভাঙা | অ্যামাইলেজ, লিপেজ, প্রোটিয়েজ | শর্করা, ফ্যাট এবং প্রোটিন ভাঙা |
4. লাইজ | বন্ধন ভাঙা / বন্ধন ছাড়া তৈরি | ডিক্যার্বক্সিলেজ, অ্যাল্ডোলেজ | গ্লাইকোলাইসিস বিক্রিয়া |
5. আইসোমেরেজ | গঠন পরিবর্তন | গ্লুকোজ-৬-ফসফেট আইসোমারেজ | গ্লুকোজকে ফ্রুক্টোজে রূপান্তর |
6. লিগেজ | রাসায়নিক বন্ধন তৈরি | DNA লিগেজ, পাইরুভেট কার্বক্সিলেজ | DNA মেরামত, গ্লুকোনিওজেনেসিস |
Read More: দুর্নীতি কিভাবে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে
এনজাইমের কাজ কি
এনজাইম (Enzyme) হলো প্রোটিন জাতীয় জৈব অনুঘটক, যা জীবদেহে রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দ্রুততর ও সহজতর করে। সাধারণত, কোষের ভেতরে এবং কোষের বাইরে রাসায়নিক বিক্রিয়া দ্রুত ঘটাতে Enzyme কাজ করে। Enzyme ছাড়া এই বিক্রিয়াগুলো স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অনেক ধীর গতিতে ঘটত।
হরমোন ও এনজাইমের মধ্যে পার্থক্য
বিষয় | হরমোন | এনজাইম |
---|
প্রকৃতি | রাসায়নিক বার্তাবাহক (Messenger) | জৈব অনুঘটক (Biocatalyst) |
গঠন | প্রোটিন, স্টেরয়েড বা অ্যামাইনো অ্যাসিড | সাধারণত প্রোটিন (কিছু RNA এনজাইমও আছে) |
কাজের ধরন | কোষে সংকেত প্রেরণ করে ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে | রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি বাড়ায় |
ক্রিয়া কোথায় | রক্তের মাধ্যমে দূরের কোষে কাজ করে | নির্দিষ্ট কোষে বা কোষের ভেতরে কাজ করে |
কাজের পদ্ধতি | কোষের রিসেপ্টরের সাথে যুক্ত হয়ে সিগন্যাল ট্রান্সডাকশন ঘটায় | সাবস্ট্রেটের সাথে যুক্ত হয়ে রাসায়নিক বন্ধন ভাঙে বা তৈরি করে |
নির্দিষ্টতা | একটি হরমোন অনেক কোষে কাজ করতে পারে | প্রতিটি এনজাইম নির্দিষ্ট সাবস্ট্রেট এর সাথে কাজ করে |
কার্য প্রভাব | দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব (ঘণ্টা বা দিন) | স্বল্পমেয়াদী প্রভাব (সেকেন্ড বা মিনিট) |
উদাহরণ | ইনসুলিন, অ্যাড্রেনালিন, থাইরোক্সিন | অ্যামাইলেজ, ক্যাটালেজ, লিপেজ |
উৎপাদন স্থান | এন্ডোক্রাইন গ্রন্থি (যেমন: থাইরয়েড, প্যানক্রিয়াস) তৈরি হয় | কোষের ভিতরে তৈরি হয় |
পরিবেশের প্রভাব | pH ও তাপমাত্রা প্রভাবিত করে না | তাপমাত্রা, pH এবং অবস্থার উপর নির্ভর করে |
পরিবহন মাধ্যম | রক্তের মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে | সাধারণত কোষের ভেতরেই কাজ করে |
নিয়ন্ত্রণ | হোমিওস্ট্যাসিস বজায় রাখতে হরমোন কাজ করে | রাসায়নিক বিক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে |
দ্রুততা | তুলনামূলক ধীর গতিতে কাজ করে | খুব দ্রুত বিক্রিয়া ঘটায় |
ভূমিকা | দেহে বিপাক, বৃদ্ধি, উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ করে | শ্বসন, হজম, ডিএনএ সংশ্লেষণ ইত্যাদিতে সাহায্য করে |
এনজাইম: শেষকথা
Enzyme হলো জীবদেহের জৈব অনুঘটক, যা রাসায়নিক বিক্রিয়াকে দ্রুততর করে। এটি জীবের শ্বসন, হজম, বিপাক, DNA সংশ্লেষণ এবং কোষীয় কার্যক্রমে অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি Enzyme নির্দিষ্ট একটি সাবস্ট্রেটের সাথে কাজ করে, যা Enzyme নির্দিষ্টতা নির্দেশ করে।
FAQs
ক্যাটালেজ এনজাইম কি?
ক্যাটালেজ হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন-ভিত্তিক এনজাইম, যা হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H₂O₂) নামক বিষাক্ত রাসায়নিককে পানি (H₂O) এবং অক্সিজেন (O₂)-এ ভেঙে দেয়।
হাইড্রোজেন পারক্সাইড জীবদেহে বিপাক প্রক্রিয়ার একটি বিষাক্ত উপজাত। এটি কোষের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে এবং কোষের উপাদানগুলো (ডিএনএ, প্রোটিন, লিপিড) নষ্ট করতে পারে। ক্যাটালেজ দ্রুত হাইড্রোজেন পারক্সাইডকে নিরাপদ যৌগে রূপান্তর করে এবং কোষকে এই ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
রাসায়নিক বিক্রিয়া (রিঅ্যাকশন)
2H₂O₂→Catalase2H₂O + O₂\text{2H₂O₂} \xrightarrow{\text{Catalase}} \text{2H₂O + O₂}
কোন এনজাইম ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে?
ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে কাজ করে এমন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম আছে, যেগুলো ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর, প্রোটিন বা ডিএনএ ধ্বংস করতে সক্ষম। এ ধরনের এনজাইমগুলি প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার অংশ এবং কিছু চিকিৎসা ও ঔষধেও ব্যবহৃত হয়।
🔥 1️⃣ লাইসোজাইম (Lysozyme)
🔥 2️⃣ পেপসিন (Pepsin)
🔥 3️⃣ ডিএনএজ (DNase)
🔥 4️⃣ প্রোটিয়েজ (Protease)
🔥 5️⃣ বিটা-ল্যাকটামেজ (Beta-lactamase)
লালারসে কোন এনজাইম থাকে?
লালারসে (Saliva) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম থাকে, যা খাদ্য হজম এবং মুখের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। প্রধানত লালার মধ্যে পাওয়া যায়: আমাইলেজ (Amylase), লাইসোজাইম (Lysozyme), লিপেজ (Lipase), লাইপোক্যালিন (Lipocalin)
আমিষ পরিপাককারী এনজাইম কোনটি?
আমিষ (প্রোটিন) পরিপাককারী এনজাইম হলো প্রোটিয়েজ (Protease)। এই এনজাইমগুলি প্রোটিনের পেপটাইড বন্ধন ভেঙে ছোট পেপটাইড বা অ্যামিনো অ্যাসিডে রূপান্তরিত করে, যা শরীরের জন্য ব্যবহারযোগ্য।
অগ্ন্যাশয় রসে কোন এনজাইম থাকে?
অগ্ন্যাশয় রসে (Pancreatic Juice) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম থাকে, যা খাদ্য পরিপাক প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য। এই এনজাইমগুলো মূলত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, এবং চর্বি হজমে সহায়ক।
অগ্ন্যাশয় রসে প্রধানত নিম্নলিখিত এনজাইমগুলি থাকে: ট্রিপসিন (Trypsin), চিমোট্রিপসিন (Chymotrypsin), এলিপেজ (Lipase), অ্যামাইলেজ (Amylase), ডিএনএজ (DNase), আরএনএজ (RNase)
শর্করা পরিপাককারী এনজাইম কোনটি?
শর্করা (Carbohydrates) পরিপাককারী এনজাইম হলো অ্যামাইলেজ (Amylase)।
চোখের পানিতে কোন ধরনের এনজাইম থাকে?
চোখের পানিতে (অশ্রু) একটি গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম লাইসোজাইম (Lysozyme) থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে সহায়ক।